জন্মঃ স.ম. বাবর আলী খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গজালিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার স্ত্রীর নাম- ফিরোজা সুলতানা ডবোসি। তার স্ত্রী ১০ ডিসেম্বর ১৯৯১ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।
শিক্ষাঃ তিনি সরকারী ব্রজলাল মহাবিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে পরবর্তীতে এল এল বি সম্পন্ন করে খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতিতে প্রাকটিস করতেন। তিনি খুলনা বারের সভাপতিও ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনঃ স.ম. বাবদ আলী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। তিনি স্কুল থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে খুলনা জেলা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন । একই সময়ে বি. এল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে ৯ নং সেক্টরে আঞ্চলিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন খুলনা-৯ (বর্তমান খুলনা-৬) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে যুবলীগ খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছিয়াত্তরে ২১ মাস এবং আটাশিতে পাঁচ মাস কারাভোগ করেন। তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত মেয়াদে পাইকগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গ্রন্থঃ স.ম. বাবর আলী “স্বাধীনতার দুর্জয় অভিযান” নামক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। যা ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণঃ খুলনার ছাত্রনেতারা সিদ্ধান্ত নেন, একটি অংশ ভারতে যাবে। যুদ্ধের জন্য অস্ত্র যোগাড় করবে, প্রশিক্ষণ নেবে। স.ম. বাবর আলী সহ আরো কয়েকজন দেশেই থেকে যান, কিন্তু হাত-পা গুটিয়েতো বসে থাকা যায় না। তাই বিভিন্নজনের কাছ থেকে অস্ত্র যোগাড়ে নেমে পড়েন। প্রায় আড়াইশত বন্দুক যোগাড় হয়। ইপিআর কমান্ডারদের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। অস্ত্র চালনার প্রাথমি জ্ঞান, পালানোর কৌশল, আক্রমনের কৌল ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ৫১জন প্রশিক্ণ শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত স.ম. বাবর আলী সহ মোট ১৪জন টিকে ছিলেন। এর মধ্যে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা ভোমরায় স.ম. বাবর আলীরা পাকিস্তানী সেনাদের সাথে এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। ইপিআর ঐ যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খুলনা জেলার পাইকগাছা, কয়রা, দাকোপ ও আশাশুনি নিয়ে গঠিত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা ২৩টি ক্যাম্প গড়ে তোলেন। এরই মাঝে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে চলে আসেন আবার অনেকে প্রশিক্ষণ নিতে যান। পাশাপাশি শত্রুদের উপর অতর্কিত আক্রমনও চলতে থাকে।
আগষ্ট মাসের দিকে ভারত থেকে প্রশিক্ষিত বড় একটি মুক্তিযোদ্ধার দল দেশে আসে। তারপরই শুরু হয় পরিকল্পিত যুদ্ধ। খুলনা অঞ্চলে সবচেয়ে বড় ও ভয়ংকর যুদ্ধ ছিল কপিলমুনিতে রাজাকার বাহিনীর ঘাটি ধ্বংসের যুদ্ধ। ডিসেম্বরের শুরুর দিকের ঐ যুদ্ধের পর খুলনার রাজাকারেরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। স.ম. বাবর আলী দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান সহ সশরীরে অংশ গ্রহণ করেন। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ আজও ১৯৭১ সালে তার বীরত্বগাথা যুদ্ধের কথা স্বরণ করে।