Shaheed Ayub and Musa Memorial Degree College | history | Please Wait.....

কলেজের ইতিহাস

স্রষ্টার এই মহান সৃষ্টিতে যত মহৎ কাজ আছে সেটা কখনই একদিনে সম্ভব হয়নি আর এই মহৎ কাজগুলো নিয়ে কাউকে না কাউকে তার স্বপ্নের পরিস্ফুটন ঘটাতে হয়েছে। এই সমস্ত মহান কাজগুলির সফল বাস্তবায়নের জন্য স্রষ্টা কিছু কিছু ক্ষণজন্মা মহাপুরুষকে পৃথিবীতে পাঠান তেমনি এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ হলেন সাধক আলমশাহ ফকিরের পূণ্য ভুমি গড়ইখালীর কৃতি সন্তান, বিশিষ্ট সমাজসেবক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ শহর আলী গাজী। এই অবহেলিত জনপদে জ্ঞানের মশাল জ্বালাবার জন্য তিনি মনে হয় আবির্ভূত হয়েছিলেন। মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলেন কিভাবে নিজ এলাকায় স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যায়। কলেজ প্রতিষ্ঠার মহৎ চিন্তায় ব্রতী হলেন তারই ৪জন ঘনিষ্ঠ সহযোগী যারা সর্বদাই নিজেদেরকে সমাজ সেবায় নিয়োজিত রাখতেন। তারা হলেন সর্ব জনাব (১) মোঃ আজমাদ হোসেন গাজী, (২) এস.এম. আয়ুব আলী, (৩) মোঃ খলিলুর রহমান সানা ও (৪) গাজী মোঃ আজিজার রহমান। তাদের এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য আলহাজ্ব মোঃ শহর আলী গাজীর জ্যেষ্ঠ পুত্র তৎকালীন সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস্ এর মহাব্যবস্থাপক, লেঃ মোঃ রহমত উল্ল্যা দাদু (অবঃ) বি. এন. বীর প্রতীক-এর নিকট প্রস্তাব নিয়ে গেলে তিনি এ প্রস্তাবে সম্মত হয়ে সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগীতার হাত বাড়ান। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আলহাজ্ব মোঃ শহর আলী গাজী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ তাঁর দুই প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র শহীদ আয়ুব আলী গাজী ও শহীদ মূসা গাজী-এর স্মরণে “শহীদ আয়ুব ও মূসা মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ” প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পাইকগাছা উপজেলার বেতবুনিয়া গ্রামের ‍কৃতি সন্তান, দক্ষিণ খুলনার এক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ (শহীদ ভ্রাতৃদ্বয়ের মামা) প্রিন্সিপ্যাল মোঃ রুহুল আমিন সাহেবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আলহাজ্ব মোঃ শহর আলী গাজীর সার্বিক সহযোগিতায় এবং এলাকার সর্বস্তরের জনগণের সহযোগীতায় ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ইংরেজি ১৯৮৬ সালের ১৭ জানুয়ারী তারিখে গড়ইখালী আলমশাহী ইনষ্টিটিউট প্রাঙ্গনে অত্র এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবী পাতড়াবুনিয়া গ্রামের বাবু ভবতোষ কুমার মন্ডল-এর সভাপতিত্বে এক সাধারণ সভায় এই মহাবিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধন হয়। ২২ জন সদস্য সমন্বয়ে মহাবিদ্যালয় পরিচালনায় জন্য একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়। উক্ত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন তৎকালীন পাইকগাছা উপজেলার স্বনামধন্য চেয়ারম্যান ও পাইকগাছা কয়রার সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট স.ম. বাবর আলী।

প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ জনাব মোঃ রুহুল আমিন সাহেবের প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে ও তাঁর কর্মজীবনের সকল মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কলেজের শ্রেণী কক্ষ, অফিস কক্ষ, আসবাবপত্র ও কলেজ চত্বরে বৃক্ষাদি রোপন করে এক মনোরম পরিবেশ তৈরী করা হয়। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই ১৯৮৮ সালে ২৯ নভেম্বর তারিখে স্মরণ কালের ঐতিহাসিক ঘূর্ণিঝড়ে কলেজের সমস্ত ঘর-বাড়ী, আসবাবপত্র ও বই পুস্তক সম্পূর্ন ধ্বংস হয়ে যায়। এই ধ্বংসোম্মুখ পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে আশায় বুক বেধে অধ্যক্ষ মোঃ রুহুল আমিন মহামান্য রাষ্ট্রপতি থেকে সরকারের স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে হয় তৎকালীন পাইকগাছা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মিহির কান্তি মজুমদারকে। তাঁরই আর্থিক বদান্যতায় ও একান্ত সহযোগিতায় মহাবিদ্যালয়ে পুনঃ শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে ইংরেজি ০১/০৭/১৯৮৮ তারিখ হতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোর থেকে মহাবিদ্যালয়টি প্রথম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়। শুরু হয় নতুন করে পথ চলা। নব নব আশায় উজ্জীবিত হয়ে আবারও শিক্ষক কর্মচারীরা নিবেদিত হয়ে ওঠে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের হার ছিল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ তার পারিবারিক অসুবিধা ও বার্ধক্য জনিত কারণে ইং ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে পদত্যাগ করেন। অধ্যক্ষের পদত্যাগের অব্যবহিত পর ইংরেজি ২৩/০১/১৯৯০ তারিখে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আলহাজ্ব মোঃ শহর আলী গাজীর সভাপতিত্বে এক সাধারণ সভায় অত্র মহাবিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রভাষক প্রণব কুমার গাইনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের উপর পুঁজি করে কলেজের সুনাম সুখ্যাতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। লেখাপড়ার গুণগত মান বৃদ্ধি ও মহাবিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলেন তৎকালীন পাইকগাছা-কয়রা নির্বাচনী এলাকার মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ও মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সন্মানিত সভাপতি অধ্যক্ষ শাহ মুহাঃ রুহুল কুদ্দুস। তিনি প্রতিনিয়ত কলেজের খোঁজ খবর নিতেন। এক পর্যায়ে লেঃ গাজী মোঃ রহমত উল্ল্যা (দাদু) অবঃ বি. এন. বীর প্রতীক এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইংরেজি ১৯৯৩ সালের জুলাই থেকে কলেজটি সরকারি বেতন অংশ প্রাপ্ত হয়। শিক্ষক কর্মচারীদের মাঝে ফিরে আসে প্রাণ চাঞ্চল্য, উৎসাহ, উচ্ছল কর্মপরায়নতা। এমনি করে চলার পথে শুধুমাত্র পথের দিশারী হিসাবে আলহাজ্ব মোঃ শহর আলী গাজীকে পাওয়া যায়। তাঁরই সাথে পাওয়া যায় তার সুযোগ্য পুত্র মোঃ রহমত উল্ল্যাকে। তাঁর আর্থিক আনুকুল্য ও তদবির-তদারক ও সহযোগীকায় কলেজের সার্বিক উন্নয়ন হয়। ইংরেজি ১৯৯৬ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত প্রনব কুমার গাইন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর ইংরেজি ১৯৯৬ সালের ২২ এপ্রিল নতুন অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন পাইকগাছা উপজেলার পারবয়ারঝাপা গ্রামের জি. এম. শাহজাহান আলী। অবহেলিত এ এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার প্রতি ঝোঁক দেখে তিনি নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন এবং সংগে পান সুযোগ্য একটি পরিচালনা পর্ষদ। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে গাজী মোঃ মোস্তফা কামাল বন্ধন (তৎকালিন গড়ইখালী ইউ.পি চেয়ারম্যান) কলেজের অধ্যক্ষের কাছে পত্রিকার একটি অংশ (ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্টের কলেজ উন্নয়ন সংক্রান্ত) এনে দেন। পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়। এ সময় সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী শহীদ আয়ুব ও মূসা মেমোরিয়াল মহাবিদ্যালযের সভাপতি হলেন পাইকগাছা-কয়রার খুলনা-৬ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এ্যাড. সেখ নুরুল হক্। তিনি গভর্নিং বডির প্রথম সভায় কলেজে পঁচিশলক্ষ টাকা ব্যয়ে ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক নির্মিত একটি দ্বিতল একাডেমিক ভবন পাওয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া মাননীয় সভাপতি এলাকার ছাত্রীদের থাকার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছাত্রী নিবাস তৈরী করে দেন এবং ছাত্রদের জন্য শহর আলী গাজী ছাত্রাবাস নির্মান করেন। ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ কলেজের স্নাতক (পাস) কোর্সের বি.এ ও বি.এস.এস চালু করা হয়। ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এইচ.এস.সি (বি.এম) কোর্সের কম্পিউটার অপারেশন ও সেক্রেটারিয়াল সায়েন্স শাখা চালু করা হয়। ২০০৯ সালে নির্বাচিত মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য খুলনা-৬ আসন গড়ইখালীর কৃতি সন্তান এ্যাডঃ মোঃ সোহরাব আলী সানার পরামর্শে কলেজের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন লেঃ মোঃ রহমত উল্ল্যা দাদু (অবঃ) বি.এন, বীর প্রতীক। আজ সব বাঁধাবিঘ্ন অতিক্রম করে তিনি এই কলেজের জন্য উচ্চ শিক্ষাদানের অনুমতি এনে অবহেলিত ও পশ্চাদপদ দক্ষিণ খুলনা সুন্দরবনের কাছে উচ্চ শিক্ষার দুয়ার খুলে দিয়েছেন যা ছিল কল্পনা, যা ছিল স্বপ্ন, তাই আজ বাস্তব সত্য হয়ে দেয়া দিয়েছে। তিনি সুনাম ও দক্ষতার সাথে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কলেজ পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১০ আগষ্ট তার মৃত্যুর পর কলেজের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে খুলনা-৬ আসনের নির্বাচিত মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আকতারউজ্জামান বাবু এর পরামর্শ ও ‍সুপারিশে আলহাজ্ব শহর আলী গাজীর সুযোগ্য পুত্র এ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদ কলেজের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার দায়িত্ব গ্রহণের পর কলেজের সার্বিক উন্নয়ন যথা-কলেজের অভ্যন্তরীন রাস্তা নির্মান, খেলার মাঠ, পুরাতন ভবন সংস্কার, ছাত্রী হোষ্টেল সংস্কার, পুকুর সংস্কার পুর্বক ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এর মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ, কলেজ লাইব্রেরীর উন্নয়ন, সকল ল্যাবরেটরীর উন্নয়ন, কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, কলেজের জন্য ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার প্রনয়ন, গ্যারেজ নির্মান সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ৯০০ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করে। কলেজটি অত্র এলাকার শিক্ষার আলো বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে।

Address

PO-Garaikhali, PS & Upozila- Paikgachha, Dist-Khulna

Phone

Office : +880 13 0911-7320

Email

Office : ayubmusacollege@gmail.com

Social