জন্ম ও পারিবারিক বর্ণনাঃ গাজী মোঃ মূসা খুলনা জেলার পাইকগাছা থানাধীন গড়ইখালী গ্রামে ১৯৪৯ সালে ১০ই
আগষ্ট জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম- আলহাজ্ব মোঃ শহর আলী গাজী। গাজী মোঃ মূসারা
মোট ১০ ভাই ও এক বোন। ভাইবোনদের মধ্যে গাজী মোঃ মুসা ৬ষ্ঠ। গাজী মোঃ মুসা ১৯৭৪ সালের
৯ই নভেম্বর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৬ সালের ২৭শে আগষ্ট তার একমাত্র কন্যা সন্তান
জন্ম গ্রহণ করে। তার নাম রাখা হয় নাদিয়া পারভীন শিমু। বর্তমানে সে আমেরিকার শিকাগোতে
স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
শিক্ষাঃ গাজী মোঃ মূসার বয়স ৬/৭ হলে তিনি তার বাবার খুলনাস্থ রূপসা থানাধীন
দেয়াড়া গ্রামের অপর বাড়ীতে চলে যান। দেয়াড়া ফ্রি-প্রাইমারী স্কুল থেকে তিনি পঞ্চম শ্রেণী
পাশ করে খুলনা শহরের মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৫ সালে এস.এস.সি
পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে এম.এম. সিটি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও ১৯৬৯ সালে বি.এ পাশ
করেন।
কর্মময় জীবনঃ গাজী মোঃ মূসা শিক্ষা জীবন শেষ করে পাকিস্তান সেনা বাহিনীতে যোগদান
করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তিনি পাকিস্তান সেনা বাহিনীর কমিশন র্যাংকে
যোগদান করার জন্য দুবার প্রিলিমিনারী ও লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেন। কিন্তু ISSB পরীক্ষায়
কৃতকার্য হতে পারেননি। তিনি ১৯৭৪ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন। স্বাধীনতা
যুদ্ধের পর ঢাকাতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্টে “ওয়েল অফিসার” হিসাবে যোগদান করেন।
পরবর্তীতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে (১ম ব্যাচ) ১৯৭৪ সালে ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে বরিশালে
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগদান করেন। তিনি বরিশাল ছাড়াও ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে যশোর,
পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে ম্যাজিষ্ট্রেট
হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করেন।
সখ ও খেলাধুলাঃ তার সবচেয়ে বড় সখ ছিল শিকার করা। ছাত্র অবস্থায় তার একটি এয়ারগান
ছিল। যা দিয়ে তিনি পাখি শিকার করতেন। পরবর্তীতে তিনি লাইসেন্স সহ একটি টুটুবোর রাইফেল
ক্রয় করে শিকার করতেন। তিনি বিভিন্ন খেলাধুলা করতেন। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলতে খুব পছন্দ
করতেন। এছাড়া ফুটবল, টেবিল টেনিসও খেলতেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণঃ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে
চলে যান। তার অপর দুইভাই যথাঃ লেঃ মোঃ রহমতউল্ল্যা, বিএন(অবঃ), বীর প্রতীক ও মোঃ ইছা গাজীও
ভারতে চলে যান। সেখানে গাজী মোঃ মূসা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা
স.ম.বাবর আলীর নেতৃত্বে তার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার সাথে খুলনার দক্ষিণ অঞ্চলের
বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি বুলেট বিদ্ধ হয়ে আহত হন।
বেটাগানের গুলি তার উরুদিয়ে পেটের ভিতর চলে যায়। কোলকাতার ব্যারাকপুর মিলিটারী হাসপাতালে অপারেশন
করে গুলি বাহির করা হয়। তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন
পদে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে চুড়ান্ত লাল মুক্তি বার্তায় তার ক্রমিক
নম্বর ০৪০২০৭০০৭০ এবং বাংলাদেশ গেজেট অনুযায়ী তার ক্রমিক নম্বর- ১১০১। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ
বিষয় মন্ত্রণালয়ের সাময়িক সনদপত্র নম্বর ৯৪৪৩১। তার পিতা তার দুই পুত্রের স্মরণে ১৯৮৬ সালে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যার
নাম দেন “শহীদ আয়ুব ও মূসা মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ”।
মৃত্যুঃ তার মৃত্যু হয় ১৯৮০ সালের ২৫শে জানুয়ারী। তিনি চাকুরীরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ
করেন। মৃত্যুকালে তিনি এক কন্যা ও একনাতি ও এক নাতনী রেখে গেছেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে
অংশ গ্রহণ করায় এলাকার মানুষ আজও শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করে।