পারিবারিক বিবরণঃ ১০ ভাই, ০১ বোন মোট ১১ ভাই-বোনের ভিতর দাদু ছিলেন সকলের বড়। তাঁর বাবা তাঁকে ‘ভলু’ বলে ডাকতেন। পারিবারিকভাবে তাঁর নামকরণ করা হয়েছিল মোঃ রহমতউল্ল্যা। ‘গাজী’ তাঁদের বংশীয় উপাধি আর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁকে ‘দাদু’ বলে সম্বোধন করতেন। পেশাগত জীবনে ছিলেন প্রথমে সাবমেরিনার পরে নৌ-বাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট এবং ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক খেতাব প্রাপ্ত হন ‘বীর প্রতীক’-এসব মিলিয়ে তিনি হন লেঃ মোঃ রহমতউল্ল্যা দাদু, বিএন, বীর প্রতীক। তাঁর পিতা মোঃ শহর আলী গাজী ছিলেন গড়ইখালী ইউনিয়নের স্বনামধন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং জেলা পরিষদ খুলনার প্রভাবশালী সদস্য। তাঁর পিতা মোঃ শহর আলী গাজী জেলা সদর থেকে ৭০ কিঃমিঃ দুরে সুদূর সুন্দরবন সন্নিহিত গড়ইখালীর স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া স্বত্ত্বেও তার ১১ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষা এবং সুনাগরিক হিসাবে বেড়ে ওঠার সকল ব্যবস্থা করেছিলেন। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার কারণে তাঁর ১০ ভাইয়ের ভিতর ৪ ভাই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। এর ভিতর এক ভাই মোঃ আয়ূব আলী গাজী যুদ্ধে শহীদ হন, আর এক ভাই গাজী মোঃ মূূসা যুদ্ধে আহত হয়েও প্রাণ নিয়ে বেঁচে যান এবং বিসিএস ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় সেই ক্ষতের কারণে ১৯৮০ সালের ২৫শে জানুয়ারী মৃত্যু বরণ করেন। ‘দাদু’ ইহকাল থেকে চলে যান গত ১০ আগষ্ট ২০১৬ বুধবার রাত সাড়ে ৯টায়। মৃত্যু কালে তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র ও ১ কন্যা রেখে গেছেন। তাঁর জেষ্ঠ্য পুত্র গাজী মোঃ মোস্তফা কামাল বন্ধন দীর্ঘদিন যাবৎ গড়ইখালী ইউনিয়নের স্বনামধন্য চেয়ারম্যান ছিলেন।
শিক্ষাঃ ‘দাদু’ ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ঐতিহ্যবাহী খুলনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে অক্সফোর্ড নামে খ্যাত সরকারি বি. এল কলেজ থেকে আই.এ পাশ করে তদানিন্তন পাকিস্তান নৌ-বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৬ ও ১৯৬৭ সালের পাক ভারত যুদ্ধে সাবমেরিনার হিসাবে তিনি অংশ গ্রহণ করন। তিনি প্যারিস ইউনিভার্সিটি থেকে Under Water Engineering কোর্স সম্পন্ন করেন। পাকিস্তানের জন্য ডলফিন সাবমেরিন “ম্যাংরো” আনার জন্য তাঁকে ফ্রান্সে প্রেরণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে তিনি ইংল্যান্ডের ম্যানডন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন।
আয়ুব ও মূসা কলেজে অবদানঃ পিতা মরহুম মোঃ শহর আলী গাজীর উদ্যোগে এবং জ্যেষ্ঠপুত্র গাজী রহমতউল্ল্যা দাদুর অনুপ্রেরণা, সহযোগতিা ও আর্থিক সহায়তায় গড়ইখালীতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শহীদ আয়ুব ও মূসা মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই পরিবারের সন্তানদের ধমনীতে শুধু পিতৃকুলের নয় মাতৃকুলেরও ঐতিহ্যবাহী শোণিত ধারা প্রবাহিত হয়েছে। তাঁর মাতৃভ্রাতা অধ্যক্ষ রুহুল আমিন আজও দক্ষিণ বাংলার শিক্ষাঙ্গণে একটি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হিসাবে বিরাজ করছেন। এ কারণেই এ পরিবারটি ভদ্রতায়, সভ্যতায়, শিক্ষায় এবং দেশ মাতৃকার সেবায় দক্ষিণ বাংলার একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিবারের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।
মুক্তিযুদ্ধের বিবরণঃ আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা এবং ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ। এ জাতির এই কাঙ্খিত স্বাধীনতা একদিনে এবং কুসুমাস্তীর্ন পথে আসেনি। এজন্য এ জাতিকে একদিকে যেমন দীর্ঘ সংগ্রাম আপোষহীন আন্দোলন করতে হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি একটি রক্তক্ষয়ী ও দুনিয়া কাঁপানো মুক্তিযুদ্ধেও অংশ গ্রহণ করতে হয়েছে। যে সকল দেশ প্রেমিক ও বীর সন্তান চির কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জনে সময়, শ্রম, সম্পদ, রক্ত কিংবা জীবন দিয়েছেন তাদের কাছে এ জাতি চির ঋণী। এ ঋণ কোন দিন শোধ করা যাবে না। তবে এ দেশ, এ জাতি যত দিন থাকবে ততদিন এ ঋণ পরিশোধের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
মহাকাশে যেমন রয়েছে অসংখ্য অগণিত গ্রহ, উপগ্রহ ও নক্ষত্ররাজী, তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নীল গগণেরও রয়েছে অসংখ্য, অগণিত মুক্তিযোদ্ধা। মহাকাশের সকল জ্যোতিস্ক খালি চোখে দেখা যায় না। খালি চোখে দেখা যায় মাত্র ছয় হাজার আর দুরবিন ক্যামেরার সাহায্যে দেখা গেছে চল্লিশ কোটিরও অধিক। সূর্য পৃথিবীর চেয়ে যেমন লক্ষ লক্ষ গুন বড় তেমনি কোন কোন নক্ষত্র সূর্যের চেয়েও কোটি কোটি গুন বড় এবং একটির থেকে অন্যটির দুরত্ব লক্ষ লক্ষ মাইল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মহাকাশে রয়েছে দু’লক্ষাধিক মুক্তিযোদ্ধা তার ভিতর রয়েছেন ৭ জন বীর শ্রেষ্ঠ, ৬৯ জন বীর উত্তম, ১৭৫ জন বীর বিক্রম এবং ৪২৬ জন বীর প্রতীক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে যেমন বলা হয হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের বলা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরই একজন লেঃ মোঃ রহমতউল্ল্যা দাদু, বিএন(অবঃ), বীর প্রতীক। তিনি শুধু বীর নন, মহাবীর। এ মহাবীরের জীবন ইতিহাস আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ। কোন বীর কিংবা কোন কৃতি সন্তান জীবদ্দশায় মূল্যায়িত হন না। প্রকৃত মূল্যায়ন শুরু হয় তাঁর মৃত্যুর পর। মহান দার্শনিক ও আদি শিক্ষাগুরু সক্রেটিস মূল্যায়িত হয়েছেন মৃত্যুর পাঁচশত বছর পর। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা মূল্যায়িত হয়েছেন তাঁর মৃত্যুর ৫০ বছর পর আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী অবদান একটি নতুন রাষ্ট্রের স্থপতির কৃতিত্ব ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল দীর্ঘ ২১ বছর। ইতিহাসের এহেন নির্মম পরিহাস রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার তার ললাট থেকে মুছতে পারেননি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে সত্য মিথ্যার দ্বন্দ্বে এক সময় মিথ্যা মুছে যায়। আর সত্য বিজয়ী হয়। ইতিহাস প্রণয়নের কাজ একদিনে শেষ হয় না। জাতীয় ইতিহাসকে সমৃদ্ধ এবং পূর্ণতা দিতে সর্বেপরি খুলনা জেলার মুখ উজ্জ্বল করতে প্রবাসে প্রথম বাঙ্গালী বিদ্রোহী দলের দলনেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বিস্ময়কর অবদানের অধিকারী নৌ-কমান্ডো-এর প্রতিষ্ঠাতা লেঃ মোঃ রহমতউল্ল্যা দাদু, বিএন(অবঃ), বীর প্রতীক এর উপর নিবিড় গবেষনা হওয়া উচিত এবং তার উপর একখানা পূর্ণাঙ্গ জীবনী গ্রন্থও প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। এ দায়িত্ব পালনে আগামীতে হয়তো কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন। আজ এখানে অতি সংক্ষেপে তাঁর জীবনের সামান্য কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।
তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ গণহত্যা এবং ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক শুনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরো ৭জন নাবিক। এই ৮ সদস্য বিশিষ্ট দলের তিনি ছিলেন দলনেতা। স্বপক্ষ ত্যাগ করে দলকে নিয়ে তিনি সুইজারল্যান্ড, বার্সিলোনা, মাদ্রিদ ও রোম হয়ে বোম্বে পৌঁছান। ৯ এপ্রিল’১৯৭১ বোম্বের মেয়র তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান। দিল্লি এবং আগ্রায় একমাস অবস্থান করার পর তিনি কলকাতা হয়ে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার মুর্শিদাবাদের পলাশীতে পৌঁছান। তাদের শপথ ছিল এই সেই পলাশীর প্রান্তর, যেখানে ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়, তাঁরা সেইখানে দাঁড়িয়ে শপথ নেন বাংলার স্বাধীনতা তাঁরা আবার ফিরিয়ে আনবেন। প্রশিক্ষণরত সেই আত্মঘাতি ছেলেরা ছিল বাঙ্গালী মায়ের স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, আবার তাদের নিয়েই গড়ে তোলেন বাংলাদেশ নৌ-কমান্ডো নামক “সুইসাইডার স্কোয়াড”। এখানেই তিনি ভারতে অবস্থানরত ৫০০ যুবক-কে নৌ-কমান্ডো হিসাবে ভর্তি করান এবং প্রশিক্ষণ দান শুরু করেন। এই কমান্ডো বাহিনী নৌপথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে তারা চট্টগ্রাম, মংলা, নারায়নগঞ্জ ও অন্যান্য স্থানে ১৩২টি জাহাজ ধ্বংস করে যুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অতি অল্প সময়েই অত্যাধুনিক অস্ত্রেসজ্জিত বিশাল শক্তিধর পাঁক বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করার পিছনে মৃত্যুর পরোয়ানার দাশক্ষত লিখে অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের যে অংশটি মরণ খেলায় মেতে উঠেছিল, তাদের কথা আজকাল অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি তেমন ফলাও করে বলা হয় না। অথচ এরাই জীবন বাজী রেখে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের শতভাগ দাবীদার।
একাত্তরের নৌ-কমান্ডোর নেতৃত্বদানকারী খুলনার কৃতিসন্তান লেঃ মোঃ রহমতউল্ল্যা দাদু (অবঃ), বিএন, বীর প্রতীক, যে এই দাবীর অগ্রভাগে অবস্থান করেছিলেন তা অনেকটাই অজানা। লেঃ মোঃ রহমতউল্ল্যা দাদুর বীরত্ব গাথা নিয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রের ইতিহাসবিদ, সহযোদ্ধা ও লেখকেরা গর্ববোধ করলেও আমাদের দেশে দৃশ্যতঃ তেমনটি চোখে পড়ে না। অথচ “সুইসাইডাল স্কোয়াড” এর সব সদস্যদের দেশ জুড়ে ‘অপারেশন জ্যাকপট” একাত্তরের ১৫ই আগষ্ট ১৯৭১ সালের রাত হতে পাক বাহিনীর তান্ডব স্বব্ধ হতে শুরু করে। এই যুদ্ধে তখন সারা বিশ্ববাসী জেনে যায় একই দিনে, একই সময়ে সারা দেশের নৌ-কমান্ডোদের “অপারেশন জ্যাকপট” যা বিশ্বময় খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়।
ভারতের নৌবাহিনীর ভাইস এডমিরাল মিহির কে রায় (PVSM, AVSM) এর ‘War in the India Ocean’ গ্রন্থের বিস্তৃত পর্বের লেখক বাংলাদেশের নৌ-যোদ্ধাদের বর্ণনায় লিখেছেন, “অন্ধকারে একটা মাইন নিয়ে পেঁপের পাতার চোংগা দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে শত্রু পক্ষের জাহাজে আক্রমন করে সঠিক সময়ে ফিরে আসা আর শত্রুদের জাহাজ ধ্বংস করা এই ইতিহাস সৃষ্টি করা একটি কঠিন কাজ”। অথচ এই কাজই করল বাংলাদেশের নৌ-কমান্ডোরা। এধরনের ভয়াবহ আত্মঘাতী যুদ্ধের একমাত্র পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশের নৌ-কমান্ডোর প্রতিষ্ঠাতা একজন অকুতোভয় সৈনিক মোঃ রহমতউল্ল্যা দাদু।
তাঁর নেতৃত্বে আনুমানিক চার হাজার গোরিলা যোদ্ধা ছিল। এই যোদ্ধাদের নিয়ে তিনি কপিলমুনি, গড়ইখালী, নীল কমল, চালনা, লক্ষীখোলা, চাপড়া, আশাশুনি, শিয়াল ডাঙ্গা ও খুলনা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি ১৭ই ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৬টায় খুলনা সার্কিট হাউস-এ প্রথম বাংলাদেশের বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ১৯৭২ খ্রিঃ ১০ জানুয়ারি ঢাকা বিমান বন্দরে তাঁর নেতৃত্বে নৌ-কন্টিজেন্টের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
দাদু স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর থেকে ৯ই জানুয়ারী ১৯৭২ পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডার সম্মেলনে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর এবং ১০ নং সেক্টর কমান্ডার এর প্রতিনিধিত্ব করেন। মরহুম জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। লেঃ মোঃ রহমতউল্ল্যা দাদু, বিএন, বীর প্রতীক-এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান থেকে ফিরে আসা নৌ-বাহিনীর অফিসার ও নাবিকদের বাংলাদেশে অবস্থানের সকল ব্যবস্থা তিনিই করেন।
১৯৭৬ খ্রিঃ তিনি নৌ-বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণ করে তিনি শিল্প জগতে প্রবেশ করেন। বরিশাল টেক্সটাইল, রাজশাহী টেক্সটাইল, সুন্দরবন টেক্সটাইল, মাদারীপুর টেক্সটাইল, কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল, সিলেট টেক্সটাইল, নোয়াখালী টেক্সটাইল এবং মাগুরা টেক্সটাইল মিল তাঁর নেতৃত্বে স্থাপিত হয়েছিল। যার জন্য সেসময় ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৮৭ সালে তিনি বি.টি.এম.সি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অবসরত্তর কর্মময় জীবনঃ বাংলাদেশে তিনি প্রথম খুলনায় আধানিবিড় বাগদা চাষ শুরু করেন। তিনি খুলনা বিভাগীয় চিংড়ী চাষী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এছাড়া খুলনা বিভাগীয় মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। তাঁর অনুপ্রেরণায় ২০০৭ সালে খুলনার বুকে প্রতিষ্ঠা করা হয় খুলনা জেলার প্রথম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক লাইব্রেরী বীরশ্রেষ্ঠ মোঃ রুহুল আমিন পাবলিক লাইব্রেরী। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই লাইব্রেরীর সভাপতি ছিলেন।
মৃত্যুঃ এই দেশপ্রেমিক কর্মবীর দুঃসাহসী যোদ্ধা গত ১০ আগষ্ট’২০১৬ রোজ বুধবার রাত সাড়ে ৯ টায় মহানগরী খুলনার শেখপাড়াস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। পরের দিন বৃহস্পতিবার জোহর নামাজ বাদ শহীদ হাদিস পার্কে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তা, সর্বস্তরের জন সাধারণ, দলমত নি্র্বিশেষে নেতৃ্স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ জানাজায় শরিক হন। এছাড়া নিজ উপজেলা পাইকগাছার পৌর মাঠে বিকাল ৫.০০টায় এবং তাঁর নিজ গ্রাম গড়ইখালিতে ৭.৩০ মিনিটে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদান করে তার পিতা মাতার সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হয়।
যেখানে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আচার্য পি.সি রায়, কবি কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার, রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ও স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলী যেমন খুলনা জেলার কৃতি সন্তানের জন্ম, সেই পবিত্র ভূমিতে জন্ম গ্রহণ করেছেন লেঃ মোঃ রহমতউল্ল্যা দাদু, বিএন(অবঃ), বীর প্রতীক। তিনি একাধারে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকর্মী ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্বজনের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তার কর্ম আর অকৃত্রিম দেশাত্মবোধের জন্য যুগ যুগ ধরে সকলের মাঝে বেঁচে থাকবেন।