জন্ম ও পারিবারিক বর্ণনাঃ আলহাজ্ব মোঃ শহর আলী গাজী, গ্রাম- গড়ইখালী, ডাকঘর- গড়ইখালী, থানা- পাইকগাছা, জেলা- খুলনাতে ১৯১৩ সালের ৭ই জুন জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জহির উদ্দিন গাজী, মাতার নাম দুলজান বিবি। তার দাদার নাম মোঃ হারেজ গাজী। শহর আলী গাজীরা চার ভাই ও চার বোন। শহর আলী গাজী ভাইদের মধ্যে মেঝো এবং ভাই বোনদের মধ্যে ৪র্থ। তার অন্যান্য ভাইয়েরা হলেন তালেব আলী গাজী, শওকত হোসেন গাজী এবং আমজাদ হোসেন গাজী। শহর আলী গাজীর মোট ১০ ছেলে ও এক কন্যা। তার সন্তানেরা সকলেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষীত ও প্রতিষ্ঠিত। তার ছেলেদের মধ্যে লেঃ মোঃ রহমতউল্ল্যা, বিএন(অবঃ), বীর প্রতীক, আয়ুব আলী গাজী, গাজী মোঃ মুছা ও মোঃ ইছা গাজী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।
শিক্ষাঃ তিনি পাইকগাছা থানার অন্তর্গত আর.কে.পি.কে হরিশচন্দ্র ইন্সিটিটিউশন এ পড়াশুনা করেন পরবর্তীতে তিনি একই থানার অন্তর্গত হরিঢালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। তিনি ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন বলে জানা যায়।
কর্মময় জীবনঃ তিনি জীবনে অনেক সংগ্রাম করে বড় হযেছেন। তিনি জীবনের শুরুতে বাড়ীতে সাবান তৈরীর মেশিন দিয়ে সাবান তৈরী ও দুগ্ধজাত মেশিন দিয়ে
দুগ্ধজাত পণ্য তৈরী করে ব্যবসা করেন। এছাড়া তিনি মাছের ডিপোর ব্যবসা করেছেন এবং তৎকালীন
সময়ে কোলকাতায় মাছ প্রেরণ করে ব্যবসা করতেন। পরবর্তী কালে তিনি তার সন্তানদের উচ্চ
শিক্ষা ও প্রকৃত মানুষ করার জন্য খুলনাস্থ ভৈরব নদীর অপর পাড়ে দেয়াড়া গ্রামে ১০ বিঘা জমির উপর একটি বাড়ী ক্রয় করে যেখানে সকল সন্তানদের রেখে পড়াশুনার ব্যবস্থা করেন। এছাড়া ভৈরব নদীর পাড়ে মিলকী দেয়াড়ায় ৫০শতক জমি ক্রয় করে সেখানে একটি ‘স’ মিল স্থাপন করেন। তিনি পাকিস্তান আমলে বন বিভাগ থেকে নিলামে সুন্দরবনের কাঠ ও গোলপাতা ক্রয় করে এ ‘স’ মিলে রেখে ব্যবসা করতেন। পরবর্তীতে তিনি নিউজ প্রিন্ট মিলের প্যাকিং বক্স করার যাবতীয় কাঠ এ ‘স’ মিলে কেটে নিউজ প্রিন্ট মিলে সরবরাহ করতেন। এছাড়া তার গুনুরী, শ্রীনগর, কালিনগর, গড়ইখালী, নুরপুর-আমিরপুর, হোগলারচর, কুমখালী ও বাইনবাড়ীয়াতে কৃষি জমি
ছিল। তিনি কৃষি জমির মাধ্যমে ধান ও মৎস্য চাষ করতেন।
রাজনৈতিক জীবনঃ তিনি ছেলে বেলা থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগ করতেন। তবে তিনি বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাস করতেন এবং তার সন্তানদের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রেরণ করেন। ১৯৩৫ সালে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন
অধ্যাদেশ মোতাবেক তিনি তৎকালীন ১১ নং গড়ইখালী ইউনিয়ন বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট
হিসাবে ১৯৩৮ সাল হতে জুন ১৯৫৯ পর্যন্ত নিষ্ঠা, সততা, দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন
করেন। এছাড়া বি.ডি এ্যাক্ট মোতাবেক ইউনিয়ন কাউন্সিল গঠিত হলে তিনি ১৯৬০-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩-১৯৭৬ সাল এবং ১৯৮৫-১৯৮৮ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ১০ নং গড়ইখালী ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান হিসাবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করেন। তিনি পাকিস্তান আমলে জেলা পরিষদের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি এম.এম. সিটি কলেজের গর্ভনিং বড়ির সদস্য ছিলেন। তিনি গড়ইখালী আলমশাহী ইন্সটিটিউশন এর সভাপতি ও বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তিনি তার জমি, অর্থ ও সামর্থ দিয়ে ১৯৮৬ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ তার দুই পুত্রের নামে “শহীদ আয়ুব ও মূসা মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ” প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
উন্নয়ন কর্মকান্ডঃ তার রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবনে তিনি তার ইউনিয়নে অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পন্ন করেছেন। তিনি প্রায় ৩০ বছর গড়ইখালী ইউনিয়নের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি অত্র ইউনিয়নে একটি কলেজ, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তা, কালভার্ট, সুপেয় পানির জন্য সরকারী পুকুর নির্মান, নদীর পাশের লঞ্চঘাট ও নৌকা পারাপার ঘাট, গড়ইখালী বাজারের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, গড়ইখালী বাজারে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মান, ডাকঘর নির্মান সহ সর্বপরী এলাকার মানুষের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। আজও এলাকার জনগন তার কথা স্মরণ করে।
সখঃ তার সবচেয়ে বড় সখ ছিল শিকার করা। তার লাইসেন্স করা রাইফেল, বন্দুক ও পিস্তল ছিল। পাকিস্তান আমলে তিনি সরকারী পাশ নিয়ে সুন্দরবনে শিকার করতে যেতেন। তিনি প্রায় ৪/৫টি বাঘ শিকার করেছেন এবং প্রচুর হরিণ শিকার করেছেন। তিনি কুকুর ও বিড়াল পুশতে খুব পছন্দ করতেন।
মৃত্যুঃ তার মৃত্যু হয় ১৯৯৭ সালের ৮ই মে। মৃত্যুকালে তিনি তার সন্তান-সন্ততি, নাতি-নাতনি ও অনেক ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে যান। এলাকার মানুষ আজও তার কথা স্মরণ করে।